নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন কৃষকেরা। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণকাজের গড় অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। কৃষকেরা বলছেন, নির্ধারিত সময়; অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে না। এতে অকালবন্যা হলে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অবশ্য হাওর উপজেলা খালিয়াজুরিতে কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু এবার জেলায় সব কটি বাঁধের কাজ শুরু হতে জানুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
জেলা পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাউবোর অধীনে প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ আছে। এবার বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০৬টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ৪৩ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এসব বাঁধের ওপর কৃষকদের প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। এর মধ্যে খালিয়াজুরি উপজেলাতে ১১৫টি, মদনে ২৪টি, মোহনগঞ্জে ২৫টি, কলমাকান্দায় ২৬টি, বারহাট্টা উপজেলায় ১০টি রয়েছে। অন্য ৬টি প্রকল্প আটপাড়া ও পূর্বধলায়।
মোহনগঞ্জের গাগলাজুর এলাকার কৃষক কাজল মিয়া বলেন, হাওরে বোরো ধান কৃষকদের একমাত্র ফসল। এই ফসলের ওপর সারা বছরের সংসার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্ঠানসহ সবকিছু নির্ভর করে। একবার ফসলহানি ঘটলে এর জের টানতে হয় সারা বছর। বাঁধ নির্মাণের পর কিছুদিন লাগে মাটি শক্ত হতে। তাই বাঁধের কাজ শেষ হতে যত দেরি হবে, তত ঝুঁকি বাড়বে।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে স্থানীয়ভাবে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে পিআইসি কমিটির সঙ্গে সভা হয়। সভা শেষে ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, খালিয়াজুরিতে ১১৫টি প্রকল্পের কাজ ৮৫ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে। এখন স্লোপ ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। বাঁধের কাজ তদারক করা হচ্ছে।
নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, হাওরে পানি দেরিতে নামায় কয়েকটি বাঁধের কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে জেলায় বাঁধের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। কৃষকদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।